যশোর-১ (শার্শা) আসনে রাজনৈতিক উত্তাপ

ফোরকান জামান,শার্শা(যশোর)প্রতিনিধি:
“আসন্ন নির্বাচনে শার্শায় মাঠে সরব বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা” ছবি: খবরপত্র
“আসন্ন নির্বাচনে শার্শায় মাঠে সরব বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা” ছবি: খবরপত্র

যশোরের শার্শা উপজেলা আসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন। বাংলাদেশের বৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল সীমান্তবর্তী হওয়ায় এ আসনের কৌশলগত গুরুত্ব অনেক বেশি। এই আসনে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে গণধিকার পরিষদ থেকেও একজন প্রার্থীর আবির্ভাব ঘটেছে। যশোর জেলার সব আসনের মধ্যে বর্তমানে সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে শার্শা আসনের দিকে।

যশোর-১ (শার্শা) আসনের ১১টি ইউনিয়নে মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১০২টি। বর্তমান ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯৯ হাজার ২৮০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৪০ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৪৮ হাজার ৮৮৩ জন।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শার্শা আসনে রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমেই বাড়ছে। ১৭ বছর পর ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশায় ভোটারদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিপুল উৎসাহ। এ আসনে বিএনপির চারজন মনোনয়ন প্রত্যাশী এবং জামায়াতে ইসলামী’র একক প্রার্থী মাওলানা আজিজুর রহমান ইতোমধ্যে প্রচার-প্রচারণায় নেমেছেন। এছাড়া গণধিকার পরিষদের প্রার্থীও সীমিত পরিসরে কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ইউনিয়ন, পৌরসভা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সমাবেশ, মিছিল, মিটিং ও সামাজিক গণসংযোগ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।

আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি মনোনয়ন প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত ধাপে প্রবেশ করেছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রার্থী নির্ধারণের কাজ চলছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা এবারের নির্বাচনে তরুণ নেতৃত্ব, তৃণমূল সংযোগ, আনুগত্য, শৃঙ্খলা ও চারিত্রিক গ্রহণযোগ্যতাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন।শার্শা আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্ষীয়ান নেতা মফিকুল হাসান তৃপ্তি মনোনয়নপ্রত্যাশী। ছাত্ররাজনীতি থেকে উঠে আসা এই নেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে সহ-দপ্তর সম্পাদক, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক এবং দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘদিন স্থানীয় রাজনীতি ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকায় তিনি সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন। তার বিরুদ্ধে কখনো দুর্নীতি, সন্ত্রাস বা চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠেনি। স্থানীয়রা বলেন, “তৃপ্তি ভাই আমাদের সুখে-দুঃখে ছায়ার মতো পাশে থেকেছেন।”

যশোর জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইমদাদুল হক বলেন, “বিএনপির ঘোষিত মনোনয়ন নীতিমালার আলোকে মফিকুল হাসান তৃপ্তির রাজনৈতিক জীবন ও ব্যক্তিত্ব একটি পূর্ণাঙ্গ মানদণ্ডে উত্তীর্ণ। তাই তৃণমূল কর্মী-সমর্থক থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের মাঝেও তার সুনাম রয়েছে।”অন্যদিকে শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ নুরুজ্জামান লিটনও মনোনয়ন প্রত্যাশী। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা মামলা-হামলার শিকার হলে তিনি তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আর্থিক ও মানবিক সহায়তা করেছেন। ২৫টি মামলা মোকাবিলা করেও তিনি প্রতিদিন দলীয় প্রোগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।

শার্শা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আশারাফুল আলম বাবু বলেন, “শার্শায় নির্বাচনী মাঠ এখন বিএনপির দখলে। একাধিক প্রার্থী থাকলেও মাঠ পর্যায়ে জনগণের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সম্পৃক্ততা রয়েছে আলহাজ নুরুজ্জামান লিটনের।”

এ আসনে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির। তিনি দলের একজন ত্যাগী নেতা হিসেবে এলাকায় পরিচিত। আওয়ামী লীগের সময় বারবার হামলার শিকার হয়েছেন এবং অসংখ্য মামলায় জর্জরিত থেকেও দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন।

বিএনপির আরও এক প্রার্থী শার্শা উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা আলহাজ খাইরুজ্জামান মধু। তিনি নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এক কণ্ঠে বলছেন, “দল যাকে যোগ্য মনে করবে আমরা সবাই তার পক্ষেই কাজ করব। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র প্রতীকেই সবাই এক হয়ে লড়াই করবে।”জামায়াতে ইসলামী’র একক প্রার্থী হচ্ছেন মাওলানা আজিজুর রহমান। তিনি কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য, যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের সহকারী পরিচালক এবং যশোর-১ (শার্শা) আসনের প্রার্থী হিসেবে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। যদিও প্রকাশ্যে জামায়াতকে মিছিল বা সমাবেশ করতে দেখা যাচ্ছে না, তবে ঘরোয়া বৈঠক ও সভা অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় সূত্র বলছে, এবারের নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে তৃণমূল নেতাকর্মীরা একযোগে কাজ করছেন।

অন্যদিকে গণধিকার পরিষদের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আশিক ইকবাল এ আসনের প্রার্থী হিসেবে নতুন মুখ। তবে তার প্রচারণা বেশ সীমিত। মাঝে মধ্যে ঘরোয়া বৈঠকে তাকে দেখা গেলেও আনুষ্ঠানিক প্রচার তেমন দেখা যায়নি।

বর্তমানে শার্শা আসনে প্রতিদিন বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীদের মিছিল, জনসমাবেশ ও গণসংযোগে নির্বাচনী মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। তবে বিএনপি ও জামায়াত ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সক্রিয় প্রচারণা এখনো চোখে পড়ছে না

এলাকার খবর

সম্পর্কিত