বেনাপোল কাস্টমস হাউসে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানে ঘুষের ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকাসহ এক রাজস্ব কর্মকর্তা ও এনজিও সদস্যকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। তবে চার ঘণ্টার নাটকীয় অবস্থার পর কেবল এনজিও সদস্যকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হলেও রাজস্ব কর্মকর্তাকে ‘অজ্ঞাত কারণে’ ছাড়িয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে যশোর দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ সালাউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম হঠাৎ বেনাপোল কাস্টমস হাউসে অভিযান চালায়। এ সময় রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তার এবং স্থানীয় এক এনজিও সদস্য হাসিবুর রহমানকে ঘুষের অর্থ লেনদেনের অভিযোগে আটক করা হয়। পরে তাঁদের কাছ থেকে প্রায় ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা উদ্ধার করে দুদক দল।
সূত্র জানায়, প্রথমে উভয়কেই কাস্টম কমিশনার অফিসে নেওয়া হয়। সেখানে প্রায় চার ঘণ্টা দরজা-জানালা বন্ধ রেখে দুদক কর্মকর্তারা তদন্ত করেন। কিন্তু শেষে শুধুমাত্র এনজিও সদস্য হাসিবুর রহমানকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়।
স্থানীয় সূত্র ও উপস্থিত ব্যক্তিদের অভিযোগ, রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তার নিজেই স্বীকার করেছেন যে, তাঁর নির্দেশে ওই ঘুষের লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। তারপরও তাঁকে কোনোভাবে আটক বা আইনগত প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করা হয়নি। এতে অভিযানের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীরা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে দুদক কর্মকর্তারা স্পষ্ট জবাব না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান। একজন সাংবাদিক জানতে চান, “উভয়ের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও কেন রাজস্ব কর্মকর্তাকে ছাড় দেওয়া হলো?”—এর জবাবে দুদকের পক্ষ থেকে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, বেনাপোল কাস্টমসে দীর্ঘদিন ধরে ঘুষ ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তাঁরা বলেন,“নিয়মিত এ ধরনের অভিযান চালানো হলে ঘুষের প্রথা অনেকটাই বন্ধ হবে।”
তবে সংবাদ সংগ্রহের সময় কয়েকজন সাংবাদিক অভিযোগ করেন, দুদক কর্মকর্তারা তাঁদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন এবং কাস্টম কমিশনার অফিসে প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছেন।
দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ সালাউদ্দীন আহমেদ বলেন,“গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। রাজস্ব কর্মকর্তা নিজেই স্বীকার করেছেন ঘুষের টাকা তাঁর নির্দেশে লেনদেন হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, অন্য কেউ জড়িত আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হবে।”
তাছাড়া বেনাপোল কাস্টম হাউস এর পক্ষ থেকে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।
স্থানীয় মহল মনে করছে, ঘুষবিরোধী এই অভিযানের পর নাটকীয়ভাবে রাজস্ব কর্মকর্তাকে মুক্তি দেওয়া দুদকের ভাবমূর্তি ও অভিযান পরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তুলেছে।