বেনাপোল কাস্টমস হাউসে ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনায় অবশেষে নাটকীয়তার অবসান ঘটেছে। তীব্র সাংবাদিক আন্দোলন ও স্থানীয় চাপের মুখে অবশেষে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কাস্টমস সুপার শামীমা আক্তারকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করেছে।
দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) যশোর জেলা দায়রা জজ আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি দুদকের তদন্ত নং-৯, স্মারক নং-২৪২২, মামলা নং-১১/২০২৫ তারিখ ০৭/১০/২০২৫ হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে।
এজাহার অনুযায়ী, আসামিরা হলেন—
১. শামীমা আক্তার, সুপার, বেনাপোল কাস্টমস হাউস, পিতা শহিদুল ইসলাম, গ্রাম: ৩০২ নাজির শংকরপুর, যশোর।
২. হাসিবুর রহমান (২৭), পিতা নাজমুল হোসেন, গ্রাম: বেনাপোল পোর্ট থানা এলাকা।
তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১৬১/১৬২/১৬৩/১৬৪ ও ১৬৫ (ক) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, সুপার শামীমা আক্তার দীর্ঘদিন ধরে এনজিও কর্মী হাসিবুর রহমানকে দিয়ে ঘুষের টাকা সংগ্রহ করতেন। তিনি বেনাপোল কাস্টমস হাউসের ৬নং গ্রুপে দায়িত্বে ছিলেন, যেখানে মূলত মোটর পার্টস ও মোটরযানের যন্ত্রাংশ আমদানি হয়। অভিযোগে বলা হয়, শামীমা আক্তার এসব পণ্যের এসএস কোড পরিবর্তনের মাধ্যমে অবৈধ সুবিধা নিতেন এবং হাসিবুরের মাধ্যমে ঘুষ লেনদেন পরিচালনা করতেন।
মোবাইল বিকাশ লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ আদান-প্রদানের প্রমাণও এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। গত ১০ আগস্ট থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন তারিখে হাসিবুর একাধিকবার বিকাশে অর্থ পাঠিয়েছেন বলে দুদক দাবি করেছে।
গত ৬ অক্টোবর বিকেলে ঘুষের ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকাসহ এনজিও কর্মী হাসিবুর রহমানকে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের সামনে হাতেনাতে আটক করে দুদক। পরে কাস্টমস সুপার শামীমা আক্তারকে ফোন দিলে তিনি হাসিবুরকে টাকা রাখার নির্দেশ দেন। পরে দুদক কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে শামীমা আক্তার বিষয়টি স্বীকার করেন।
যদিও সেদিন রাতেই নাটকীয়ভাবে হাসিবুরকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়, তবে সাংবাদিক ও স্থানীয় মহলের কঠোর প্রতিবাদে দুদক পরদিন (৭ অক্টোবর) আনুষ্ঠানিকভাবে শামীমা আক্তারকেও আটক দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে।
এই ঘটনায় বেনাপোল কাস্টমস হাউসে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সিএন্ডএফ প্রতিনিধিরা দুদকের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।