সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. আশরাফুল হুদা বলেছেন, গোপালগঞ্জের সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার জন্য গোয়েন্দা ব্যর্থতা প্রত্যক্ষভাবে দায়ী। তিনি মনে করেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যদি সময়মতো সঠিক তথ্য দিত এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করত, তাহলে এই ঘটনা এড়ানো সম্ভব হতো।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) রাজধানীর এফডিসিতে ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’ আয়োজিত এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ছায়া সংসদের বিষয় ছিল—
“বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা মব সন্ত্রাস বৃদ্ধির প্রধান কারণ”।
❝ নির্বাচন পেছাতে গোপালগঞ্জের ঘটনাকে ব্যবহার করা হচ্ছে ❞
আশরাফুল হুদা বলেন,
> “জুলাই চেতনা নস্যাৎ করে পতিত প্রধানমন্ত্রীকে পুনর্বাসনের গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। এর মাধ্যমে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। গোপালগঞ্জের সাম্প্রতিক ঘটনাটি সেই চক্রান্তেরই অংশ।”
তিনি আরও বলেন,
> “সোহাগ হত্যাকাণ্ডের পরপরই পুলিশের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু দুই দিন পর ঘটনা ভাইরাল না হওয়া পর্যন্ত পুলিশের নীরবতা দুঃখজনক। যদি কোনো পুলিশ সদস্যের গাফিলতি থাকে, তাহলে তার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া জরুরি।”
আশরাফুল হুদা দাবি করেন,
> “সব মব সন্ত্রাস সাধারণ জনগণ করে না। কেউ কেউ পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে বিএনপির ওপর দোষ চাপাচ্ছে।”
“মব সন্ত্রাস গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে নতুন ক্যান্সার” — কিরণ
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন,
> “মব সন্ত্রাস আজ জাতীয় জীবনে এক নতুন ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে। এটি শুধু জননিরাপত্তা নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকেও হুমকির মুখে ফেলছে।”
তিনি ১/১১-এর ‘লগি বৈঠা’র ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে বলেন,
> “এ ঘটনাকে বাংলাদেশে মব সন্ত্রাসের সূচনা ধরা হয়, যার বিচার আজও হয়নি। বর্তমানে এই ‘মব জাস্টিস’-এর শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। যদি এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে দেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।”
মব সন্ত্রাস প্রতিরোধে ৭ দফা সুপারিশ
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি মব সন্ত্রাস দমনে নিচের ৭টি সুপারিশ পেশ করেছে:
১. রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা নিশ্চিত করা
২. বিচার ব্যবস্থার সংস্কার ও দীর্ঘসূত্রিতা নিরসন
৩. নৈতিকতা ও মূল্যবোধ গড়ে তুলে জনসচেতনতা বৃদ্ধি
4. গুজব ও ঘৃণার কনটেন্ট দমনে সোশ্যাল মিডিয়ায় কঠোর নজরদারি ও বিটিআরসির কার্যকর ভূমিকা
৫. রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে মব সন্ত্রাসবিরোধী অঙ্গীকার
৬. সামাজিক-অর্থনৈতিক ভারসাম্য, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য হ্রাস ও সুশিক্ষা
৭. গণমাধ্যমের সম্পৃক্ততা ও ইতিবাচক ভূমিকার গুরুত্ব।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ বিজয়ী
ছায়া সংসদের প্রতিযোগিতায় সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের দল বিজয় অর্জন করে।
বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন:
অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস,
অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন,
সাংবাদিক সাইদুর রহমান,
আহমেদ সরওয়ার,
এম এম বাদশাহ্
ও মনিরুজ্জামান মিশন।
প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী ও অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।