এনবিআরের শাটডাউন ‘গ্রহণযোগ্য নয়’—ব্যবসায়ীদের সম্মিলিত হুঁশিয়ারি

বিশেষ প্রতিনিধি:
“এরা সারা জীবন আমাদের জ্বালাইছে এখন সরকারকে জ্বালাচ্ছে, ভবিষ্যতে গোটা জাতিকেই জ্বালাবে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।” ছবি: খবরপত্র
“এরা সারা জীবন আমাদের জ্বালাইছে এখন সরকারকে জ্বালাচ্ছে, ভবিষ্যতে গোটা জাতিকেই জ্বালাবে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।” ছবি: খবরপত্র

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বর্তমান অচলাবস্থা ও “কমপ্লিট শাটডাউন” কর্মসূচিকে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতারা। শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, “একমাত্র যুদ্ধ পরিস্থিতি ছাড়া পৃথিবীর কোথাও এমন নজির নেই।”

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী (পারভেজ)। এ সময় আইসিসি সভাপতি মাহবুবুর রহমান, বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেলসহ দেশের প্রায় সব ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন, এনবিআরের কর্মকর্তারা হুট করে বলে দিলেন অফিস বন্ধ—এটা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা ট্রেড ইউনিয়নের নেতা নন যে, এভাবে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান অচল করে দেবেন।

ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, এমনিতেই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংলাপ স্তিমিত। এর মধ্যে এনবিআরের চলমান কর্মবিরতি অর্থনীতির লাইফলাইনকে অচল করে ফেলেছে। তারা বলেন, আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সময় নষ্ট না করে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিডা’র সঙ্গে যৌথ আলোচনায় বসুক—এটাই এখন সবচেয়ে জরুরি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে এখনই প্রয়োজন দ্রুত সমাধান। এজন্য আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, কোনো প্রকার পূর্বশর্ত ছাড়া অনতিবিলম্বে কাজে যোগদান করুন এবং দেশকে সংকট থেকে রক্ষা করুন।

আইসিসি সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, “এনবিআরের কেউ যদি কাল বলেন তারা কোনো কর্মকর্তাকে অপসারণ চান—তাও কি মেনে নিতে হবে? এনবিআর বা অন্য কোনো সরকারি সংস্থা ট্রেড ইউনিয়ন নয়। আলোচনা হতে পারে, মত প্রকাশ হতে পারে। কিন্তু সরকার সিদ্ধান্ত নেবে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে। আমাকে জানানো হয়েছে, সরকার তাদের আলোচনার আমন্ত্রণ জানালেও তারা সেটি প্রত্যাখ্যান করেছে।”

তিনি বলেন, “এত লম্বা সময় অর্থনীতির লাইফলাইন বন্ধ রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সবাইকে সম্মান রেখে বলতে চাই—এনবিআরের সব কর্মকর্তার প্রতি আহ্বান, এ ধরনের আন্দোলন অবিলম্বে বন্ধ করুন।”

বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, “আমরা সব সময় এনবিআর ও কাস্টমসের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে ব্যবসা পরিচালনা করতে চাই। কারণ বাস্তবে আমরা তাদের কাছে অনেকটা জিম্মি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতা ও অর্থের ভাগাভাগি নিয়ে যে বিবাদ চলছে, তা গোটা জাতিকে বিপদে ফেলতে পারে। আমরা সেটা চাই না।”

তিনি বলেন, “এরা সারা জীবন আমাদের জ্বালাইছে এখন সরকারকে জ্বালাচ্ছে, ভবিষ্যতে গোটা জাতিকেই জ্বালাবে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।”

সংবাদ সম্মেলনের শেষ অংশে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, “আমরা চাচ্ছি সংস্কার হোক, আইন মেনে চলা হোক, দুর্নীতি কমুক। কিন্তু তার জন্য পুরো অর্থনীতি অচল করে দেওয়া যাবে না। আমরা বিশ্বাস করি, সবার অংশগ্রহণে একটি ইনক্লুসিভ আলোচনার মাধ্যমে এই সংকটের যৌক্তিক সমাধান সম্ভব। যেখানে সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তারা আগের মতোই জাতির সেবা করতে পারবেন এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখবেন।”

এলাকার খবর

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত