এনবিআরের ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু: রাজস্ব খাতে উত্তেজনা চরমে

খবরপত্র ডেস্ক
এনবিআরের ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু: রাজস্ব খাতে উত্তেজনা চরমে ছবি: খবরপত্র
এনবিআরের ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু: রাজস্ব খাতে উত্তেজনা চরমে ছবি: খবরপত্র

ঘুষের বিনিময়ে কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ছয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ রোববার থেকে এ অনুসন্ধান শুরু হয়।

দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম।

অভিযুক্ত ছয় এনবিআর কর্মকর্তা হলেন:

১.এ কে এম বদিউল আলম, সদস্য, আয়কর নীতি বিভাগ

২.হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার, অতিরিক্ত কমিশনার, নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর

৩.মির্জা আশিক রানা, অতিরিক্ত কমিশনার, ঢাকা-৮ কর অঞ্চল

৪.মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, অতিরিক্ত কর কমিশনার, ঢাকা কর অঞ্চল-১৬

৫.সাধন কুমার কণ্ডু, অতিরিক্ত কমিশনার, ঢাকা দক্ষিণ কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট

৬.মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দীন, যুগ্ম কর কমিশনার, বিএসএস কর একাডেমি

আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারাও তালিকায়:

এনবিআরের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই ছয়জনের মধ্যে অন্তত পাঁচজন এনবিআরের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

বিশেষভাবে, হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি এবং মির্জা আশিক রানা ও মোনালিসা সুস্মিতা ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি। এই পরিষদের ব্যানারে এনবিআরে চলমান সংস্কার আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে।

গত ১২ মে থেকে এনবিআরের কর্মকর্তারা আন্দোলনে রয়েছেন, যার ফলে রাজস্ব আদায়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এতে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমেও প্রভাব পড়ছে।

আন্দোলনের পটভূমি:

সরকার চলতি বছরের ১২ মে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে নতুন দুটি বিভাগ গঠন করে—‘রাজস্বনীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’। এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের একটি শর্ত বাস্তবায়নের অংশ। উদ্দেশ্য হলো করনীতির নির্ধারণ এবং কর আদায়ের কার্যক্রম পৃথক করা।

যদিও এনবিআরের কর্মকর্তারা এ প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেননি, তবে নতুন গঠিত বিভাগে রাজস্ব খাতের কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, এই সংস্কারে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের মতামত উপেক্ষা করা হচ্ছে।

সরকার কড়াকড়ি পদক্ষেপ নিচ্ছে:

চলমান অচলাবস্থার মধ্যেই আজ রোববার সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এনবিআরের সব চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সেবা ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের দ্রুত কাজে ফেরার আহ্বান জানানো হয়েছে। সরকার হুঁশিয়ারি দিয়েছে, দায়িত্বে অবহেলা করলে জনগণ ও অর্থনীতির স্বার্থে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চূড়ান্ত পর্যায়ে উত্তেজনা:

এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে চলমান এই আন্দোলন এবং দুদকের অনুসন্ধান রাজস্ব খাতে এক নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। একদিকে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ, অন্যদিকে প্রশাসনিক সংস্কারের জটিলতা—সবমিলিয়ে এনবিআরে এক অস্থির সময় পার করছে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সংস্থা। 

 

এলাকার খবর

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত