বেনাপোল স্থলবন্দরে রাজস্ব আয় বাড়লেও বাড়েনি সুবিধা, ক্ষোভ ব্যবসায়ীদের

ফোরকান জামান,শার্শা(যশোর)প্রতিনিধি:
বেনাপোল স্থলবন্দরে রাজস্ব আয় বাড়লেও বাড়েনি সুবিধা, ক্ষোভ ব্যবসায়ীদের ছবি: খবরপত্র
বেনাপোল স্থলবন্দরে রাজস্ব আয় বাড়লেও বাড়েনি সুবিধা, ক্ষোভ ব্যবসায়ীদের ছবি: খবরপত্র

বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানি-রফতানি পণ্য থেকে ৭৮ কোটি ১৪ লাখ ৫১ হাজার ৬৩৮ টাকা রাজস্ব আয় করেছে। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৬ কোটি ৪৩ লাখ ৯৮ হাজার ৭৯৪ টাকা বেশি। বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, পণ্যের সঠিক ওজন নির্ণয় এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ায় রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে রাজস্ব আয় বাড়লেও বন্দর ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় সুবিধা এখনো নিশ্চিত হয়নি বলে অভিযোগ ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব দেওয়া হলেও পণ্য রক্ষণাবেক্ষণে যথাযথ অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। বর্ষা মৌসুমে গুদামে পানি ঢুকে আমদানিকৃত পণ্যের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, শেড ও ইয়ার্ডের অভাবে খোলা আকাশের নিচে পণ্য রাখার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৯৫ হাজার ৮৯৯টি ট্রাকের মাধ্যমে ভারত থেকে ২০ লাখ ১১ হাজার ২৬৭ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে এবং ৪৭ হাজার ৪৩৭টি ট্রাকে রফতানি হয়েছে চার লাখ ২১ হাজার ৭১৩ মেট্রিক টন পণ্য। এ থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ রাজস্ব আদায় করেছে ৭৮ কোটি টাকার বেশি।

অন্যদিকে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি ছিল এক লাখ ১৯ হাজার ৪৯৩টি ট্রাকে ২১ লাখ ৩০ হাজার ২২৮ মেট্রিক টন এবং রফতানি ছিল ৪৭ হাজার ৮২৮টি ট্রাকে চার লাখ ৫৬ হাজার ৬৭৩ মেট্রিক টন পণ্য। সে বছর বন্দর রাজস্ব আয় করেছিল ৭১ কোটি ৭০ লাখ ৫২ হাজার ৮৪৪ টাকা।

বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, "বন্দরে প্রতিবছর প্রায় ৩০ লাখ মেট্রিক টন পণ্যের বাণিজ্য হয়। অথচ বন্দরে রয়েছে মাত্র ৩৩টি শেড, তিনটি ওপেন ইয়ার্ড, একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড, একটি রফতানি টার্মিনাল এবং ৪১ একর জায়গায় একটি কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল— যা বর্তমান চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয়।"

আমদানিকারক উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, "খোলা আকাশের নিচে পণ্য রাখতে হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই গুদামে পানি ঢুকে পড়ে এবং পণ্য নষ্ট হয়। তবুও কোন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না।"

হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহীদ আলী বলেন, "শ্রমিকরা দিনরাত কাজ করে রাজস্ব বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখলেও তারা এখনো ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত।"

এ বিষয়ে বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক শামিম হোসেন বলেন, "আমদানি পণ্যের ওজন নির্ভুলভাবে স্কেলে পরিমাপ হচ্ছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার কারণে রাজস্ব আয় বেড়েছে। পণ্য রক্ষণাবেক্ষণের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য উপর মহলে জানানো হয়েছে, আশা করি ভবিষ্যতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে।"

তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, শুধু আশ্বাসে নয়, বাস্তব পরিবর্তন জরুরি। না হলে রাজস্ব বাড়লেও ক্ষতির বোঝা বইতে হবে আমদানিকারকদেরই।

এলাকার খবর

সম্পর্কিত