নামাজ—আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপনকারী এক মহৎ ইবাদত। এটি এমন এক সাধনা, যেখানে একজন মুমিন দুনিয়ার সব ব্যস্ততা ভুলে গিয়ে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে তার রবের সামনে সমর্পণ করে।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) নামাজকে “চোখের শীতলতা” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: "সুগন্ধি ও নারীকে আমার কাছে অতি প্রিয় করে দেয়া হয়েছে, আর আমার চোখের শীতলতা রাখা হয়েছে সালাতের মধ্যে।" (আহমাদ ও নাসায়ী)
নামাজ আদায়ের সময় অন্তরে এমন অনুভূতি থাকা উচিত—মনে হচ্ছে, আমি যেন আল্লাহকে দেখছি। আর যদি তা সম্ভব না হয়, তবে অন্তত এই বিশ্বাস নিয়ে ইবাদত করা উচিত যে, তিনি আমাকে দেখছেন। হাদিসে নবী (সা.) বলেন: “এমনভাবে ইবাদত করো যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছো। যদি তা না পারো, তবে জেনে রেখো, তিনি তোমাকে দেখছেন।” (বুখারি: ৫০, মুসলিম: ৮)
তবে বাস্তবে দেখা যায়, নামাজে দাঁড়ালে অনেকের মন অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে—শয়তানের কুমন্ত্রণা কিংবা পারিপার্শ্বিক ব্যস্ততা তার একাগ্রতা নষ্ট করে দেয়। ফলে নামাজে মনোযোগ ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
গাফেল অবস্থায় নামাজ আদায়—কবুল হবে?
মনোযোগহীন ও অন্যমনস্কভাবে নামাজ আদায় করাকে ইসলামে নিন্দনীয় বলা হয়েছে। তবে এটি একেবারে নামাজ পরিত্যাগকারীর মতো নয়। কারণ, এমন ব্যক্তি অন্তত ফরজ আদায়ের চেষ্টা করেছে এবং সাময়িক হলেও আল্লাহর স্মরণে নিমগ্ন হয়েছে।
এমন নামাজও অন্তত সেই উপকার বয়ে আনবে যে, সে বেনামাজীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে না। কিন্তু যদি সে ইচ্ছাকৃতভাবে অমনোযোগী হয়ে নামাজে দাঁড়ায় এবং আল্লাহর প্রতি খেয়াল না রেখে তাচ্ছিল্যভরে নামাজ আদায় করে—তবে তার অবস্থা হতে পারে একেবারে ভয়াবহ।
তাফসিরমূলক ব্যাখ্যা
তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন–এর ভাষ্যে বলা হয়েছে:
“মনোযোগহীন নামাজের পরিণতি আশা ও আশঙ্কার মাঝামাঝি। এতে যেমন সওয়াবের আশা করা যায়, তেমনি শাস্তির ভয়ও রয়েছে। কারণ, যে প্রভুর সামনে হাজির হয়ে কেউ মনোযোগী নয়—তার অবস্থা সেই গোলামের চেয়েও করুণ, যে আদৌ প্রভুর সামনে আসে না।”
উপসংহার
মনোযোগ ছাড়া নামাজ আদায় করলেও তা বাতিল হয় না। তবে সেই নামাজের প্রকৃত সৌন্দর্য, প্রশান্তি ও পূর্ণ পুরস্কার পেতে হলে চাই খুশু–খুজু, একাগ্রতা এবং হৃদয়ের উপস্থিতি। নামাজের সময় আমাদের চেষ্টাটা হওয়া উচিত—আল্লাহ ছাড়া সব কিছু ভুলে গিয়ে তাঁর দাসত্বে নিমগ্ন হওয়া।