টানা ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল। বন্দরের বিভিন্ন শেড ও খোলা ইয়ার্ডে হাঁটুসমান পানি জমে কোটি কোটি টাকার আমদানিকৃত পণ্য পড়েছে চরম ঝুঁকিতে। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও পণ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন আনসার বাহিনীর সদস্যরা।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে পরিচালিত হয় দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ স্থলবাণিজ্য। প্রতিদিন ভারত থেকে গড়ে ২০০ থেকে ২৫০টি পণ্যবোঝাই ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করে। এসব পণ্যের সংরক্ষণের জন্য বন্দরে রয়েছে ৩৩টি শেড, ৩টি ওপেন ইয়ার্ড এবং একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড। তবে পরিকল্পনাহীন অবকাঠামো এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে প্রতিবছর বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার ভয়াবহ চিত্র দেখা যায়।
চলতি জুলাই মাসের ১৪ তারিখ থেকে টানা বৃষ্টিতে বন্দরের ৯, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর শেডসহ বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে গেছে। এতে করে খোলা ইয়ার্ডে রাখা পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যান চলাচলেও সৃষ্টি হয়েছে মারাত্মক বিঘ্ন।
এ অবস্থায় বন্দরের নিরাপত্তা রক্ষাকারী আনসার বাহিনীর সদস্যরা মানবিক ও পেশাদার ভূমিকা পালন করছেন। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে শুধু পণ্য পাহারা নয়, বরং তাদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও পালন করছেন তারা।
বন্দরের প্লাটুন কমান্ডার হেলাল উজ্জামান জানান, “২৪ ঘণ্টা পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে আমাদের ডিউটি করতে হচ্ছে। অনেক সদস্য ইতোমধ্যেই ঠান্ডা, সর্দি ও চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তবুও আমরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। প্রশাসনের কেউ আমাদের খবর পর্যন্ত নেয় না।”
নিতা কোম্পানি লিমিটেডের অফিস সহকারী মো. আকরাম হোসেন বলেন, “যে পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে পুরো বন্দর তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই সময় আনসার সদস্যরা দায়িত্ব না নিলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেত। তারা অসাধারণ মানবিকতা ও সততার পরিচয় দিচ্ছেন।”
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, “বন্দরে আনসার বাহিনীর গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিটি চেকপয়েন্টে তাদের জন্য ছাউনি থাকা দরকার। প্রশাসনের উচিত তাদের কাজের স্বীকৃতি দেওয়া এবং যথাযথ সুরক্ষা নিশ্চিত করা।”
বর্তমানে বন্দরে দায়িত্ব পালন করছেন এক প্লাটুন আনসার সদস্য। এর মধ্যে রয়েছেন একজন প্লাটুন কমান্ডার, ৬ জন এপিসি ও ১৫৮ জন সদস্য। সীমিত বেতন ও স্বীকৃতির অভাবেও তারা দায়িত্ব পালনে কোনো কার্পণ্য করছেন না।
স্থানীয়রা বলছেন, শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন নয়—বন্দরের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের নিরাপত্তা, প্রশিক্ষণ এবং প্রণোদনার দিকেও সরকারের নজর দেওয়া জরুরি। তা না হলে ভবিষ্যতে যেকোনো দুর্যোগে বন্দর কার্যক্রমে বড় ধরনের অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে।