প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা আর পরিবেশ রক্ষার দায়বদ্ধতা থেকেই একজন তরুণ গড়ে তুলেছেন ভিন্নধর্মী অনুপ্রেরণার গল্প। তিনি রাসেল হোসেন। ছোটবেলা থেকেই গাছপালা ও সবুজ প্রকৃতির প্রতি অনুরাগ তাকে শুধু পরিবেশ সচেতন তরুণেই পরিণত করেনি, বরং দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও স্বীকৃতি এনে দিয়েছে।
রাসেল হোসেনের পরিবেশ যাত্রা শুরু হয় খুব অল্প বয়সে। নিজের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে প্রথমে কয়েকটি গাছ কিনে রোপণ করেন তিনি। সেই ছোট্ট উদ্যোগই আজ পরিণত হয়েছে বিশাল এক বৃক্ষরোপণ অভিযানে। তার নিজস্ব প্রচেষ্টা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় ইতোমধ্যে দুই হাজারেরও বেশি গাছ রোপণ করেছেন তিনি। শুধু গাছ লাগানো নয়, নিয়মিত পানি দেওয়া, সার দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যার মাধ্যমে প্রতিটি গাছকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার বিশ্বাস—একটি গাছ রোপণের চেয়েও বড় দায়িত্ব হলো গাছটিকে টিকিয়ে রাখা।
বর্তমানে তিনি মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বোটানি বিভাগ থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ের বড় একটি অংশ ব্যয় করছেন বৃক্ষরোপণ, সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন এবং পরিবেশবান্ধব কর্মসূচিতে।
রাসেল হোসেনের নিরলস পরিশ্রম ও আন্তরিকতার ফলেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তিনি স্বীকৃতি পেয়েছেন। সম্প্রতি আমেরিকার একাধিক সুনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর (MSc in Environmental Science) প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য I-20 পেয়েছেন। এই অর্জন শুধু তার ব্যক্তিগত জীবনের নয়, বরং বাংলাদেশি তরুণদের জন্যও গর্বের বিষয়।
নিজের স্বপ্ন সম্পর্কে রাসেল হোসেন বলেন,
“আমি চাই পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে গভীরভাবে গবেষণা করতে। আমার লক্ষ্য শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, বরং বৈশ্বিক পরিসরেও পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় অবদান রাখা।”
শিক্ষাবিদ ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাসেল হোসেনের মতো তরুণদের এমন ইতিবাচক পদক্ষেপ দেশের জন্য এক অনন্য উদাহরণ। তাদের মতে, সমাজে যদি আরও বেশি তরুণ এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে, তবে পরিবেশবান্ধব প্রজন্ম গড়ে তোলা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে।
পরিবেশ ও জলবায়ু সংকট এখন বৈশ্বিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। প্রতিনিয়ত বাড়ছে গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন, বন উজাড়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির ঝুঁকি। এই প্রেক্ষাপটে রাসেল হোসেনের মতো তরুণদের নিরলস পরিশ্রম প্রমাণ করে—ব্যক্তিগত উদ্যোগও বৈশ্বিক সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সচেতন মহলের বিশ্বাস, রাসেল হোসেনের এই যাত্রা অন্য তরুণদেরও অনুপ্রাণিত করবে। কারণ একেকটি গাছ যেমন ছায়া দেয়, অক্সিজেন দেয়, তেমনি একজন পরিবেশপ্রেমী তরুণও সমাজে আশা জাগায়। আর এই আশাই আগামী প্রজন্মের জন্য টেকসই ও সবুজ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।