বেনাপোলের মশিরডাঙ্গা বারোপোতা গ্রামের বাংলাদেশ ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মো. রেজওয়ান হোসেনকে আট বছর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে গুম করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিনের এই নিখোঁজ ঘটনাটির সত্যতা যাচাইয়ে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল সম্প্রতি বেনাপোলে এসে কাজ শুরু করেছে।
পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট বেনাপোল ভূমি অফিসের পাশ থেকে তৎকালীন বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি অপূর্ব হাসানের নির্দেশে এসআই নূর আলম রেজওয়ানকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি আর ফিরে আসেননি। পরিবারের ভাষায়, তাকে “অন্যায়ভাবে ও পরিকল্পিতভাবে” তুলে নিয়ে গুম করা হয়েছে।
রেজওয়ানের বড় ভাই জানান, “সেদিন দুপুর ১২টার দিকে বেনাপোল পোর্ট সংলগ্ন দুর্গাপুর বাজার থেকে প্রকাশ্যে রেজওয়ানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দোকান মালিক, কর্মচারী ও বহু মানুষ সে দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছে। আমরা খবর পেয়ে থানায় গেলে পুলিশ গ্রেপ্তারের কথা অস্বীকার করে। তারপর থেকেই আমরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হচ্ছি, কিন্তু কেউ কোনো সহযোগিতা করছে না।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জেনেছি—ওসি অপূর্ব হাসান, এসআই নূর আলম ও তদন্ত কর্মকর্তা খন্দকার শামীম আহম্মেদ এ ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। পুলিশের মতো রাষ্ট্রীয় সংস্থা যদি বেআইনি ও অমানবিকভাবে একজন নিরপরাধ মানুষকে তুলে নেয়, তাহলে সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচারের আশায় যাবে কোথায়?”
রেজওয়ানের মা সেলিনা খাতুন ও বাবা মিজানুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আট বছর ধরে আমরা শুধু ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশায় দিন গুনছি। কোথাও কোনো খোঁজ নেই। যারা এই অন্যায় করেছে, তাদের বিচার চাই। আমাদের ছেলে যদি অপরাধী হতো, তবে আদালতে তুলুক—এভাবে নিখোঁজ কেন?”
পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল ১৫ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে বেনাপোল এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, সাক্ষ্যগ্রহণ ও প্রমাণ সংগ্রহ শুরু করেছে। এ সময় তারা স্থানীয় প্রশাসন, প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন।
এদিকে, সাবেক ওসি অপূর্ব হাসান ,এসআই নূর আলম ও তদন্ত কর্মকর্তা খন্দকার শামীম আহম্মেদের ভূমিকা নিয়েও তদন্ত চলছে বলে ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে। তারা রেজওয়ানকে গুম করার ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিলেন কি না—তা যাচাই করছে তদন্ত দল।
ঘটনাটি নিয়ে এর আগে রেজওয়ানের পরিবার একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করেছে, মানববন্ধন করেছে এবং দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের দারস্থ হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি সংস্থা থেকে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হয়নি বলে অভিযোগ করেছে পরিবার।
স্থানীয় সচেতন মহল, শিক্ষক সমাজ ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন—এ ধরনের নিখোঁজের ঘটনা শুধু একটি পরিবারের নয়, গোটা সমাজের জন্য গভীর উদ্বেগের। তারা বলেছেন, “আন্তর্জাতিক মানের স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা গেলে এমন গুম-অপহরণ সংস্কৃতি বন্ধ হতে পারে।”
আট বছর পর রেজওয়ান হোসেনের গুমের ঘটনা আবারও আলোচনায় এসেছে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে। পরিবার ও স্থানীয়রা আশা করছেন, এবার হয়তো রেজওয়ানের নিখোঁজ রহস্যের অবসান ঘটবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।