আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ৩ নভেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সারা দেশে ২৩৭ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। দলটির হাইকমান্ডের ভাষ্য, বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল ফলে দু-এক জায়গায় সামান্য মতপার্থক্য বা অবস্থানগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি আনুগত্য ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সংকট দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে আশাবাদী নেতারা।
যশোর জেলার শার্শা উপজেলা, যেখানে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল, রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা। সীমান্তঘেঁষা ও বাণিজ্যিক এই অঞ্চলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সব সময়ই জাতীয় রাজনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
এই উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত শার্শা থেকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মফিকুল হাসান তৃপ্তি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় রাজনীতিতে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য নেতা হিসেবে পরিচিত।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, শার্শা উপজেলায় অতীতে যেমন, এখনো বেশ কয়েকজন যোগ্য ও ত্যাগী নেতা রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কেন্দ্রীয় যুবনেতা নুরুজ্জামান লিটন, এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা খাইরুজ্জামান মধু।
৩ নভেম্বরের আগে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রচলিত স্লোগান ছিল,ধানের শীষ যার কাছে, আমরা তার পাশে। তবে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর সক্রিয়ভাবে তৃপ্তির পক্ষে প্রচার প্রচারণা করতে দেখা যাচ্ছে না সভাপতি আবুল হাসান জহির, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কেন্দ্রীয় যুবনেতা নুরুজ্জামান লিটন। যা সাধারণ মানুষ ও দলের সিনিয়র নেতাদের মতে, বিএনপির ঐক্যের জন্য শুভ নয়।
হাইকমান্ডের বার্তা,ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রার্থীকে জয়ী করতে হবে,বিএনপি হাইকমান্ড দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিয়েছে ঘোষিত প্রার্থীকে জয়ী করার লক্ষ্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। প্রার্থিতা নিয়ে দু-এক জায়গায় সমস্যা হতে পারে। কিন্তু দলীয় উদ্যোগে বিষয়গুলো দ্রুত ঠিক হয়ে যাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি,সবাই একসাথে কাজ করে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করবে।
বেনাপোল পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের ভারত বলেন, পরিবর্তনের অপেক্ষায় পাকা ধান নষ্ট করার অধিকার আমাদের নেই। এখনই সময় একসাথে কাজ করার। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে ব্যক্তিগত মনোভাব দলের ক্ষতি ডেকে আনবে। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি এবং জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করি।
বেনাপোল পৌর বিএনপির সভাপতি নাজিম উদ্দীন বলেন, সময় নষ্ট না করে দলের স্বার্থে সবাইকে একত্রিত হয়ে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর জন্য কাজ করতে হবে। যেই ধানের শীষ নিয়ে আমরা সবসময় মাঠে থেকেছি, সেই প্রতীক এখন তৃপ্তি ভাইয়ের হাতে। তাই সবাই মিলে কাজ করলে জয় আমাদের নিশ্চিত।
শার্শা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের মাঝে ক্ষণিকের ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে, কিন্তু লক্ষ্য একটাই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বিএনপিকে ক্ষমতায় আনা। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে হবে।
যশোর জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও শার্শা উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব ইমদাদুল হক ইমদাদ বলেন,তৃপ্তি ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা নতুন উদ্যমে মাঠে নেমেছি। তরুণ প্রজন্ম বিশ্বাস করে, এই নেতৃত্বই শার্শাকে নতুনভাবে সংগঠিত করতে পারবে।
শার্শা উপজেলা বিএনপির ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থী মফিকুল হাসান তৃপ্তি বলেন,আমি বিশ্বাস করি, বিএনপি ত্যাগী নেতাকর্মীদের দল। সামান্য মতভেদ থাকলেও আমরা সবাই শেষ পর্যন্ত একত্র হব। আমি কারো বিরুদ্ধে নয়, সবার সহযোগিতা নিয়ে শার্শাকে আবারো বিএনপির দুর্গে পরিণত করতে চাই।
তিনি আরও বলেন,আমরা জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে লড়ছি। দলের সিদ্ধান্তই আমাদের পথনির্দেশনা। আসুন, আমরা সবাই মিলে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করি।
স্থানীয় সূত্র মতে, বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশনা ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের আন্তরিক প্রচেষ্টায় শার্শা উপজেলায় ধীরে ধীরে ঐক্যের সুর ফিরে আসবে।মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীরা প্রচারণায় নেমে পড়েছেন মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদি এই ঐক্য অব্যাহত থাকে, তবে শার্শা আসনে বিএনপি আগামীর নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হবে। অনেক কর্মীর ভাষায়, ব্যক্তির নয়, দলের জয়ের জন্য কাজ করতে হবে।