সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির মনোনয়নকে ঘিরে বিভিন্ন স্থানে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং ও সহিংসতার খবর পাওয়া গিয়েছে। দীর্ঘদিন সরকারবিরোধী আন্দোলন, মামলা-হামলা ও নির্যাতনের কারণে অনেক নেতা মাঠের রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। অন্যদিকে, আন্দোলন ও সাংগঠনিক কাজে সক্রিয় থাকা নতুন মুখও সামনে এসেছে। ফলে মনোনয়নপ্রাপ্ত ব্যক্তির যোগ্যতা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে অসন্তোষ ও সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, প্রত্যেকেই নিজেকে যোগ্য ভাবেন এবং দলীয় স্বার্থের তুলনায় ব্যক্তিগত প্রত্যাশা সামনে চলে আসে বলেই এসব উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে দল যার ওপর আস্থা ও মূল্যায়নের ভিত্তিতে মনোনয়ন দিয়েছে সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়াই দলীয় শৃঙ্খলা ও আদর্শ রক্ষার মূলনীতি বলে নির্দেশনা রয়েছে উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বের।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অভ্যন্তরীণ বিরোধ দলকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। একদিকে নেতাকর্মীদের মনোবল কমে যায়, অন্যদিকে মাঠ পর্যায়ে সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে জনগণের চোখে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল পরিস্থিতিকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগানোর সুযোগ পেয়ে যায়। সবচেয়ে বড় কথা— নির্বাচনের সময়ে ঐক্যের অভাব হলে ভোটের ফলাফল নেতিবাচক হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
দলের ভেতরকার এই সংকট দূর করতে তিনটি দিককে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ এসেছে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দলীয় অভিজ্ঞ নেতাদের কাছ থেকে।
প্রথমত, সংগঠনের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বৃদ্ধি মনোনয়ন পাওয়া ও না পাওয়া উভয় পক্ষকে সংলাপে বসতে হবে। ব্যক্তিগত অবস্থানের চেয়ে দল ও জনগণের স্বার্থকে বড় করে তুলে ধরতে হবে।
দ্বিতীয়ত, উর্ধ্বতন নেতৃত্বের কঠোর নির্দেশনা ও তদারকি— দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা এবং স্থানীয় পর্যায়ে নিরপেক্ষ সমন্বয়কারী নিয়োগ করা প্রয়োজন।
তৃতীয়ত, জনমতের ভূমিকা— জনগণ এখন পরিবর্তন চান। তাই নেতাদের আচরণ ও সিদ্ধান্তে জনগণের প্রত্যাশা অগ্রাধিকার পাওয়া জরুরি। জনগণকেন্দ্রিক রাজনীতি হলেই ব্যক্তিগত স্বার্থবিরোধী সংঘাত কমে আসে।
যদি অভ্যন্তরীণ কোন্দল সমাধান করা না যায়, তাহলে আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব নেগেটিভ হতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। এতে ভোট টানার শক্তি কমে যাবে, ক্যাম্পেইন দুর্বল হবে, মাঠ পর্যায়ে সমন্বয় ভেঙে পড়বে এবং প্রতিপক্ষের সুবিধা বেড়ে যাবে।
পরিশেষে বলা যায় - ব্যক্তির চেয়ে দল,স্বার্থের চেয়ে আদর্শ এবং গ্রুপিংয়ের চেয়ে ঐক্য—এসবের ওপর গুরুত্বারোপ করেই দলকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে।